জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত সদস্যদের নিয়ে তৈরি গবেষকদের একটি দল একটি মডেল তৈরি করেছেন। তাদের দাবি যে এ মডেল অনুসরণ করলে চললে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবেশ গড় প্লাস্টিক নির্গমন একদম শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব। পহেলা অক্টোবর Science জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে, দলটি তাদের মডেল এবং এর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং ব্যবহার পরিবেশগত সমস্যার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ প্লাস্টিক ভেঙ্গে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা microplastic (MP) এ রুপান্তিরত হয়। যেহেত প্লিচক সহজে পঁচে না। তাই প্লাস্টিকের এসকল ক্ষুদ্র কণা কার্যত প্রতিটি পানির উৎসের সাথে মিশে যায়, যার ফলে জীবের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বাংলাদেশের পানিতে পাওয়া দেশি মাছের দেহেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এছাড়া প্লাস্টিকের উৎপাদন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলে কারণ উৎপাদনের সময় নির্গত হয় গ্রিন হাউজ গ্যাস। গবেষকরা প্লাস্টিকের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ৪০০ টিরও বেশি গবেষণা প্রচেষ্টার দ্বারা প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন এবং একটি মডেল তৈরি করেছেন যা দিয়ে গবেষকদের দাবি হিসেবে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবেশ গড় প্লাস্টিক নির্গমন একদম শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব।

মডেলটি মুলত চক্রকার মডেল অনুসরণ করে। এখানে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের আর জৈববস্তু থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক রিসাইকেল করার সময় নির্গত হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনা। গবেষকরা বলেন যে পুনর্ব্যবহারের হার ৭০% হলেও নিট-জিরো ইমিশনে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট হবে, আর এর ফলো শক্তির সঞ্চয় হবে ৩৪% থেকে ৫৩%। এ কাজে জড়িত অপারেশনাল খরচ অন্যান্য কার্বন-ক্যাপচার প্রক্রিয়ার সমান হবে। গবেষকদের মতে বিশ্বব্যাপী তাদের মডেল বাস্তবায়ন খরচ হবে বছরে প্রায় ২৪৪ বিলিয়ন ডলার। যেটা ২০১৯ এ বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ (৩৭০ বলিয়ন)-এর চেয়ে অনেক কম।
প্লাস্টিকের উৎপাদন এখন বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৬ শতাংশ এবং বর্তমান পূর্বাভাস বলছে যে যদি প্রক্রিয়াগুলি এখনকার মতো চলতে থাকে তবে পরবর্তী ৩০ বছরে সংখ্যাটি ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। প্লাস্টিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি আমাদের কাছে আছে। আমাদের শুধু সেটা প্রয়োগের ইচ্ছা প্রসন করতে হবে। আসুন প্লাস্টিক ব্যবহারে সবাই সচেতন হই। আপনি কী জানেন কাচের বোতলে থাকা বেভারেজ (কোমল পানিও) প্লিস্টিকের বোতলে থাকা বেভারেজ থেকে বেশি স্বাদের ;)।
গবেষণাপত্র: Achieving net-zero greenhouse gas emission plastics by a circular carbon economy, Science (2021).