অযৌন জনন বয়ে আনছে ক্ষতিকর মিউটেশন

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস আর্লিংটনে জীববিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একদল গবেষক একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন যেখানে বলা হয়েছে, যেসব প্রজাতি অযৌন প্রজনন করে তারা যৌন প্রজননকারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর জেনেটিক মিউটেশন ঘটায়।

এই গবেষণার ফলাফল মে মাসে Evolution জার্নালে প্রকাশ করা হয়, যা বিবর্তন জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির একটি পত্রিকা। সেই পেপার ‘পার্থেনোজেনেসিস হুইপটেইল মাইটোকন্ড্রিয়াতে অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপনের হার দ্বিগুণ করে’-এর প্রধান লেখক ছিলেন ইউটিএ (ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস আর্লিংটন)-এর বায়োলজির ডক্টরাল ফেলো জস মাল্ডোনাডো।

সহকারী লেখকদের মধ্যে আছেন টি. জে. ফিরনেনো, ইউনিভার্সিটি অফ ডেনভারের পোস্টডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট যিনি ২০২০ সালে ইউটিএ থেকে পিএইচডি করেন; অ্যালেক্সান্ডার হল, থার্মো ফিশার সায়েন্টিফিকের একজন পণ্যের প্রয়োগ বিশেষজ্ঞ, যিনি ২০১৬ সালে ইউটিএ থেকে পিএইচডি করেন; এবং ম্যাট ফুজিটা, ইউটিএ-এর বায়োলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, যিনি এখন মাল্ডোনাডোর ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজর এবং পূর্বে ফিরনেনো এবং হলেরও ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজর ছিলেন।

পার্থেনোজেনেসিস হলো অযৌন প্রজননের একটি প্রাকৃতিক মাধ্যম যেখানে শুক্রাণু নিষিক্ত হওয়া ছাড়াই ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, যৌন প্রজনন অযৌন প্রজননের তুলনায় কম ক্ষতিকর জেনেটিক মিউটেশন ঘটায়।

মাল্ডোনাডো এবং তার সহ-গবেষকরা তাদের নতুন গবেষণায় অ্যাসপিডোলিসের (হুইপটেইল টিকটিকিদের একটি গণ) ওপর গবেষণা করে তাদের এই থিওরি পরীক্ষা করেছেন। যেহেতু যুক্তরাষ্টের দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মেক্সিকোর উত্তরে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তাই এই সরীসৃপরা পার্থেনোজেনেসিসের মৌলিক সেলুলার মেকানিজম এবং অযৌন প্রজননের জিনগত পরিবর্তন জানার জন্য উৎকৃষ্ট।

এই দলের গবেষকরা পূর্বানুমান করেছিল যে, বংশগতভাবে পার্থেনোজেনেটিকরা যৌন প্রজননকারীদের চেয়ে অনেক দ্রুত মিউটেশন ঘটায়। এবং এটা পরীক্ষা করার জন্য তারা অযৌন ও যৌন প্রজননকারী হুইপটেইল টিকটিকিদের মাইটোকন্ড্রিয়ার সম্পূর্ণ জিনোম তথ্য ব্যবহার করে।

মাল্ডোনাডো বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখায় যে, যখন হুইপটেইল টিকটিকিরা যৌন থেকে অযৌন প্রজনন করে, তখন মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোমে দ্রুত ক্ষতিকর মিউটেশন সংঘটিত হয়।” তিনি আরো বলেন, “যদি অযৌন প্রজনন যৌন প্রজননের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর মিউটেশন ঘটায়, যা কি-না আমাদের গবেষণাতে দেখা যায়, তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতে পারে যে, কেন প্রকৃতিতে অযৌন প্রজনন এত বিরল এবং কেন প্রাকৃতিক দুনিয়ায় যৌন মিলনই প্রজননের প্রধান মাধ্যম হয়ে আসছে।”

গবেষণার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমের অযৌন ও যৌন উভয় হুইপটাইল প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করে এবং পাশাপাশি সিয়াটলের বার্ক ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘর এবং নিউ ইয়র্কের আমেরিকান ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘর থেকে কিছু অতিরিক্ত টিস্যু সংগ্রহ করেন।

তাদের গবেষণা দেখায় যে, অযৌনতে রূপান্তরের ফলে পার্থেনোজেনেটিক টিকটিকিদের মাঝে স্বাভাবিক ন্যাচারাল সিলেকশন ঘটে এবং বিপরীত মিউটেশনের কারণে জিনের প্রোটিনসমূহের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় এবং প্রায়শই তাদের ন্যাচারাল সিলেকশন ঘটে। এই ফলাফল পূর্বের এক মৌখিক অনুমানকে সমর্থন করে, যেখানে বলা হয়ে থাকে যে, “যৌন মিলনের অভাবে ক্রমাগত অপরিবর্তনীয় ক্ষতিকর মিউটেশন ঘটবে যেহেতু বিশুদ্ধ সিলেকশন করার ও ক্ষতিকর মিউটেশন অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকবে না।”

ফিরনেনো বলেন, “আমাদের গবেষণার মূল ফলাফল এই যে, অযৌন ভার্টিব্রাটারা বা কমপক্ষে এই টিকটিকিরা যৌন প্রজাতিদের চেয়ে অধিক হারে অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন করে যা অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে একটা প্যারাডক্স আছে, যৌন প্রজনন ঘটানো অধিক ব্যয়বহুল কিন্তু এটাই প্রজননের চিরায়ত পদ্ধতি।”

গবেষণাপত্র: Jose A. Maldonado et al, Parthenogenesis doubles the rate of amino acid substitution in whiptail mitochondria, Evolution (2022)
DOI: 10.1111/evo.14509