পর্যায় সারণী নিতান্তই রসায়নের জিনিস। কিন্তু এবার জীববিজ্ঞানেও আসছে পর্যায় সারণী। সম্প্রতি একদল গবেষক বিভিন্ন প্রজাতির কোষের নিউক্লিয়াসের জন্য একটা পর্যায় সারণী প্রকাশ করেছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে গত মে মাসের ২৮ তারিখ বিখ্যাত জার্নাল “Science” এ।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান DNA Zoo এর গবেষকরা এটি শুরু করেছেন। একটা কোষের ক্রোমোজম যেটা কিনা দুই মিটারের বেশি লম্বা হতে পারে, সেটি কিভাবে ১০ মাইক্রো মিটারের চেয়ে ছোট একটা নিউক্লিয়াসে থাকে! এই ব্যাপারটি তারা পরীক্ষা করে দেখছিলেন। বিবর্তনীয় ধারার বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেছেন, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে নিউক্লিয়াসে বিন্যাস প্রায় একই রকম।
অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এক ধরণের বিন্যাস না, আসলে দুই ধরনের বিন্যাস দেখা যাচ্ছে। একটা বিন্যাস হল খবরের পত্রিকার পাতার মত, প্রতিটি পাতার দুইপাশ বাইরে উন্মুক্ত, আর মাঝামাঝি জায়গায় অন্য পাতাগুলোর সাথে যুক্ত। অপর বিন্যাসটি হল প্রতিটি ক্রোমোজমে নিজে নিজে কুচঁকে, ভাজ হয়ে বৃত্তাকার আকৃতি নেয়। সবগুলো প্রজাতির নিউক্লিয়াসেই ক্রোমোজমগুলো দুটি বিন্যাসের কোনো একটি অনুযায়ী বিন্যস্ত।
মজার ব্যপার হল নিউক্লিয়াসের বিন্যাস একটি থেকে অপরটিতে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রকৃতিতে একটি থেকে অপরটিতে দুই রকমের পরিবর্তনেরই অনেক উদাহরণ পেয়েছেন গবেষকেরা।
“DNA Zoo” এর কো-অর্ডিনর এবং বেইলর কলেজ অব মেডিসিন এর অ্যাসোসিয়েশন প্রফেসর ইরেজ লিব্যারম্যান এইডেন বলেন-
“প্রাপ্ত উপাত্ত নির্দেশ করে যে, বিবর্তনের ধারায় প্রজাতি নিউক্লিয়াসকে একটি ধরণ থেকে অন্য ধরণে পরিবর্তন করতে পারে। আমরা বিস্মিত হয়েছি যে এর মেকানিজম কি হতে পারে? ল্যাবরেটরিতে কি এক ধরনের নিউক্লিয়াসকে অন্য ধরনে পরিবর্তন করা সম্ভব হতে পারে?”


ছবি: Evgeny Gromov
এইডেনের দল যখন এসব ভাবছিল, তখন নেদারল্যান্ডসের ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এর বেঞ্জামিন রোল্যান্ড ল্যাবরেটরিতে অন্য একটি গবেষক দল অপ্রত্যাশিত কিন্তু দারুণ একটি ফল পেয়ে যান। তারা কাজ করছিলেন “কনডেনসিন-২ (condensin II)” নামের একটি প্রোটিন নিয়ে। এই প্রোটিনটি কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই প্রোটিনকে যখন কিছুটা পরিবর্তন করে মানব কোষে প্রবেশ করানো হল, দেখা গেল নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজমের পুরো বিন্যাসটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে।


ছবি: Mary Ellen Scherl
দুই গবেষক দল মিলিত হয় অস্ট্রিয়ার মাউন্টেইনস-এ, একটি কনফারেন্সে যেখানে রোল্যান্ড তাদের গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করেন। অতঃপর তারা বুঝতে পারেন যে তারা একই বিষয়ে কাজ করছেন।
নেদারল্যান্ডসের গবেষণা দলের সিনিয়র সদস রোল্যান্ড বলেন-” আমরা যখন “DNA -Zoo” এর পরীক্ষা করা জিনোমগুলো দেখলাম, বুঝতে পারলাম যে বিবর্তন এই পরীক্ষা ইতোমধ্যে অনেক অনেক বার করে ফেলেছে। যখন কোনো প্রজাতিতে মিউটেশনে “কনডেনসিন-২” ভেঙে যায়, তখন নিউক্লিয়াস পুরোপুরি বদলে যায়।”
আরো পড়ুন: ফেসবুকের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! একক শব্দের ছবি থেকে লেখার স্টাইলটি কপি করতে সক্ষম
তারপর দুটি গবেষণা দল যখন একসাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে, তখনই সারা পৃথিবী করোনার মহামারীতে স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন কাজ চালিয়ে যাওয়ার এক মাত্র উপায় ছিল কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সিমুলেশন করা। তখন রাইস ইউনিভার্সিটির Centre for theoretical biological physics (CTBP) এর কয়েকজন গবেষক দলে যুক্ত হন।


ছবি: Jason Ku, Erik Demaine/Baylor College of Medicine
CTBP এর একজন পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং গবেষণা পত্রের কো-অথর সুমিতভ ব্রহ্মচারী বলেন-
“আমরা দুই বিলিয়ন বছরে নিউক্লিয়াসের বিবর্তনের অকল্পনীয় রকমের বিশাল জরিপ দিয়ে গবেষণা শুরু করেছি। এবং আমরা দেখেছি যে একটা সাধারণ মেকানিজম অনেক বড় ভুমিকা রেখেছে এবং চাইলে সেটি আমরা ল্যাবে আমাদের নিজের ওপরই পুনরাবৃত্তি করাতে পারি। এটা নিশ্চয়ই থ্রি-ডি জিনোম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথে একটি বড় অগ্রগতি!”
গবেষণাপত্র: 3D genomics across the tree of life reveals condensin II as a determinant of architecture type. Science (2021)
outstanding ♥♦