রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত সম্ভাব্য নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার
সম্প্রতি, এমআইটির বিজ্ঞানীরা হিমাস্ট্যাটিন (Himastatin) নামক এক জটিল প্রকৃতিক অণু সংশ্লেষণের অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। যার ফলে, হিমাস্ট্যাটিনে থাকা অ্যান্টি-বায়োটিক সম্ভাবনাকে অ্যান্টি-বায়োটিক হিসেবে ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
সম্প্রতি, এমআইটির বিজ্ঞানীরা হিমাস্ট্যাটিন (Himastatin) নামক এক জটিল প্রকৃতিক অণু সংশ্লেষণের অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। যার ফলে, হিমাস্ট্যাটিনে থাকা অ্যান্টি-বায়োটিক সম্ভাবনাকে অ্যান্টি-বায়োটিক হিসেবে ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নতুন সংশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যাবহার করে গবেষকরা হিমাস্ট্যটিন এবং এর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট উন্মোচন করতে পেরেছেন। এর অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টই জীবাণু প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে বলে দেখা গেছে। এটি ব্যাকটেরিয়ার কোষঝিল্লি আক্রমণ করে ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এখন বিজ্ঞানীরা পূর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অ্যান্টি-বায়োটিকের নঁকশা করার আশা করছেন।
এমআইটির একজন রসায়নের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুফসেগ বলেছেন, ”আমরা এখন যা করতে চাই তা হলো, এটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। এটির কাজের কৌশল সম্পর্কে জানা। যার ফলে আমরা এর কর্ম-কৌশল কে ত্বরান্বিত করতে পারব। এখন আমরা এর ভৌত ও রাসায়নিক বিষয়গুলি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। অনুসন্ধান করছি যে কীভাবে এটি ব্যাকটেরিয়ার কোষ-ঝিল্লিকে আক্রমণ করে। ”
হিমাস্ট্যাটিন মাটিতে বসবাসকারী একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়। এটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯০ সালে। প্রাণী গবেষণায়, এটির ক্যান্সার প্রতিরোধী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় ডোজ তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত। তখন যৌগটির সম্ভাব্য জীবাণুরোধী কার্যকলাপও লক্ষ্যণীয় ছিলো। কিন্তু সেই সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে গবেষণা করা হয়নি।
অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি যৌগ হিমাস্ট্যাটিনের অস্বাভাবিক হোমোডিমেরিক গঠন রয়েছে যার কারণ এটিকে সংশ্লেষণ করতে চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়। ছবি: Pixabay
হিমাস্ট্যাটিন একটি জটিল যৌগ যা দুটি অভিন্ন সাব-ইউনিট মনোমার দ্বারা গঠিত। দুটি মনোমার যুক্ত হয়ে ডাইমার গঠন করে। এই দুটি সাব-ইউনিট একটি ছয় কার্বন বিশিষ্ট রিং এর দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে। এই কার্বন-কার্বন বন্ধনটি যৌগটির জীবাণুরোধী কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিকে গবেষকরা হেমাস্টাটিন সংশ্লেষণের জন্য এই বন্ধনটি তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু MIT এর গবেষকরা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। তারা ব্যাকটেরিয়া গুলো যেভাবে হেমাস্টাটিন উৎপন্ন করে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। ওই ব্যাকটেরিয়াগুলো বিশেষ এনজাইম ব্যবহার করে দুটি মনোমারকে কার্বন বন্ধনের সাথে যুক্ত করে।
গবেষকেরা প্রথমেই অ্যামাইনো এসিডের বিল্ডিং থেকে জটিল মনোমার তৈরি করেছিলেন। তারপর তারা এমআইটির মভসাঘি গ্রুপ দ্বারা উদ্ভাবিত নতুন একটি ডাইমেরিজেশন কৌশল ব্যবহার করেন। ফলে অ্যানিলিন জারিত হয়ে কার্বন র্যাডিকেল তৈরি হয়।পরে এরা বিক্রিয়া করে কার্বন বন্ধন তৈরি করে যেটি মনোমারের সাথে যুক্ত হয়। মভসাঘি গ্রুপ এই কৌশল নিয়ে খুবই আনন্দিত।
গবেষকেরা হিমাস্ট্যাটিনের জীবাণুরোধী ক্ষমতা বিশ্লেষণ করতে একটি বিশেষ শ্রেণী নিয়েও গবেষণা করেছেন। তারা বুঝেছেন যে, এটি ব্যাকটেরিয়ার কোষ-ঝিল্লিকে নষ্ট করে ফেলে। এখন তারা আরো অনেক শ্রেণী নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন।যার কারণে তারা আরো শক্তিশালী অ্যান্টি-বায়োটিক তৈরির আশা রাখছেন।
গবেষণাপত্র: Total synthesis of himastatin, Science (2022).