সারাবিশ্বে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রথম সেরা দশের একটা হলো ডেঙ্গু। প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে। মারা যায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় নিয়ে এসেছেন ইন্দোনেশিয়ার গাদাজাহ-মাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথের প্রফেসর উটারিনি এবং তার সহকর্মীরা।
আমরা জানি, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এই ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মূলত Aedes aegypty নামের মশার মাধ্যমেই এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। ফলে ডেঙ্গু রোধে এই এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণের বা ধ্বংসের কথা বলা হয়। মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা, কোথায় পানি জমতে না দেয়া, মশার ডিম ধ্বংস করা ইত্যাদি চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু উটারিনি এবং তার সহকর্মীরা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করেছেন।
১৯ শতকের প্রথম দিকেই wolbachia নামের একটা ব্যাকটেরিয়ার কথা জানতেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে এই ব্যাকটেরিয়া গবেষকদের নজর কারে এর বিস্তারের গতির জন্য। খুব সহজেই এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পরতে পারে। প্রায় ৪০ ভাগ ইনসেক্টের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত এডিস মশা তার মধ্যে নেই। উটারিনি এবং তার দল লক্ষ্য করলেন যে, ‘Wolbachia’ নামের ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয় না। সেটা ২০০৬ সালের কথা, অতঃপর পাঁচ বছর পর প্রথম পরীক্ষা করা হয় অস্ট্রেলিয়ার দুটি উপশহরে। সেখানে তিন লক্ষ ‘wolbachia’ আক্রান্ত মশা ছেড়ে দেওয়া হয় এবং চার মাসের মাথায় দেখা যায় শতকরা ৮৮ ভাগ মশা ‘wolbachia’ আক্রান্ত। মানে সেখানকার এডিস মশাগুলো আর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। বিশ্বের মশা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা World Mosquito Program (WMP) থেকে বলা হয়েছে, এটা সব স্থানে কাজ করা উচিত। তারপর আরও অনেকগুলো ট্রায়াল হয়েছে। ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগাকার্তা শহরের ১২ টি জোনে এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত মশা ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ফলাফল দেখা যায় এক বছর শেষে ঐসব এলাকার ৯৫ ভাগ পর্যন্ত মশা ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত। অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার যেখানে ৯.৪, সেখানে ঐসব এলাকায় সেটা ২.৩৷ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার কমে গেছে শতকরা ৮৬ ভাগ। সব মিলিয়ে এটা ডেঙ্গু প্রতিরোধে শতকরা ৭৭ ভাগ কার্যকর। যদিও ২০২০ এর মহামারীর কারণে পুরো ট্রায়ালের সময়ের আগেই শেষ করে ফেলতে হয়েছে।
‘Wolbachia’ ডেঙ্গুর চারটা সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই সমান কর্যকর। এমনকি ইয়েলো ফেভার, জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এটি কাজ করে। WMP এখন এগারোটা দেশে এটা নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের লক্ষ্য আগামী ২৫ সালের মাঝে ৭৫ মিলিয়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধ-বিলিয়ন মানুষকে এই সেবার আওতায় আনা।
গবেষণা পত্রটি গতকাল অর্থাৎ ১০ই জুন The NEW ENGLAND JOURNAL of MEDICINE জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সোর্সঃ Nature, The Atlantic
Comments 1