মানব দেহের প্রায় প্রতিটি কোষে জীবনের নির্দেশাবলী ধারণকারী ক্রোমোজোমের ভর University College London (UCL)-এর গবেষকদের নেতৃত্বে নতুন গবেষণায় প্রথমবারের জন্য এক্স-রে দিয়ে পরিমাপ করা হয়েছে।
Chromosome Research জার্নালে প্রকাশিক গবেষনাটিতে গবেষকগন যুক্তরাজ্যের জাতীয় সিঙ্ক্রোট্রন (একধরনের কণা-ত্বরণযন্ত্র) সুবিধা সমৃদ্ধ ল্যাব Diamond Light Source এ শক্তিশালি এক্স-রে বীম ব্যবহার করে ৪৬ টি ক্রোমোজোমের ইলেকট্রন সংখ্যা নির্ণয় করেছে। এবং পরে সেই ইলেকট্রন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ভর নির্ণয় করা হয়েছে।
তারা দেখতে পেয়েছে যে ক্রোমোজোমগুলি তাদের উপস্থিত ডিএনএর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি ভারী – যেটা পূর্বের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ভারী। এর ফলে ধারণ করা হচ্ছে যে সেখানে এমন কোনো উপাদান রয়েছে যেটা এখনও আবিষ্কৃত হয় নি।
ডিএনএ পাশাপাশি ক্রোমোসোমে বিভিন্ন প্রকারের প্রোটিন থাকে যা ডিএনএকে রিড করা থেকে শুরু করে কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া দীর্ঘ ২ মিটার ডিএনএ সুতা কীভাবে কোষের মধ্যে শক্তপোক্ত ভাবে থাকবে তার নির্দেশ পর্যন্ত।

সিনিয়র লেখক প্রফেসর ইয়ান রবিনসন (UCL এর লন্ডন সেন্টার ফর ন্যানো টেকনোলজির) বলেছেন,
“ক্রোমোসোম নিয়ে বিজ্ঞানীরা ১৩০ বছর ধরে গবেষনা করেছেন তবে এখনও এই জটিল কাঠামোর কিছু অংশ রয়েছে যা খুব কম বোঝা যায়।”
“আন্তর্জাতিক গবেষণা Human Genome Project থেকে আমরা ডিএনএর ভর জানতে পেরেছি, কিন্তু এই প্রথম আমরা এই ডিএনএ অন্তর্ভুক্ত ক্রোমোজমের ভর স্পষ্টভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছি।”
“আমাদের পরিমাপের দেখা গেছে যে আমাদের প্রতিটি কোষের ৪৬ টি ক্রোমোজোমের ভর ১৪২ পিকোগ্রাম (এক গ্রাম ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ)। যেটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভারি এবং যদি অনুলিপি করা হয় তবে ক্রোমোসোমের অব্যক্ত অতিরিক্ত পরিমাণের দিকে নির্দেশ করে। যেটা জানতে আরো গবেষনা করা প্রয়োজন।”
গবেষণায় গবেষকরা এক্স-রে টাইকোগ্রাফি (X-ray ptychography) নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে এক্স-রে বীম ক্রোমোসোমগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন প্যার্টানকে একসাথে করে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ত্রিমাত্রিক পুনর্গঠিত মডেল তৈরি করে। এরকম ভালো রেজোলিউশন সম্বভ হওয়ার কারণ হলো Diamond Light Source এ করা সেই এক্স-রে বীম সূর্যের চেয়ে কয়েক মিলিয়ন গুন উজ্জ্বল ছিলো (অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট সময়ে খুব বড় সংখ্যক ফোটন পাস করে যাচ্ছিল)।
ক্রোমোজোমগুলি কোষ বিভাজনের মেটাফেস চিত্রিত পর্যায়ে ছিলো, দুটি আলাদা কোষে ভাগ হওয়ার ঠিক আগে মূহুর্তে। এসময় প্যাকেজিং প্রোটিনগুলি ডিএনএটিকে খুব কমপ্যাক্ট, সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে সরিয়ে দেয়। যেটা বেশ অনুকুল পরিবেশ।
UCL-র লন্ডন সেন্টার ফর ন্যানো টেকনোলজির পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং গবেষণাপত্রের শীর্ষস্থানীয় লেখক অর্চনা ভারতিয়া বলেন,
“ক্রোমোজোমগুলির সম্পর্কে আরও ভাল বোঝার ফলে মানব স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকতে পারে।
“শুধু রোগীর নমুনা থেকে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য মেডিকেল ল্যাবগুলিতে ক্রোমোজোম নিজে বিপুল পরিমাণ গবেষনা করা হয়। ক্রোমোজোম কে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার যে উন্নতি ঘটবে এর ফলে প্রাপ্ত ফল আমাদের যা দিতে পারে তা মূল্যবানতীত।”
প্রতিটি মানব কোষ, মেটাফেজে সাধারণত ক্রোমোজোমের ২৩ জোড়া বা মোট ৪৬ টি থাকে। এর মধ্যে ডিএনএর ৩.৫ মিলিয়ন বেস জোড়ার চারটি অনুলিপি রয়েছে।
গবেষনাটি ৩১ শে মার্চ, ২০২১ এ Chromosome Research জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে
গবেষনা পত্র: X-ray Ptychography Imaging of Human Chromosomes After Low-dose Irradiation, Chromosome Research (2021)
DOI: 10.1007/s10577-021-09660-7
সোর্স: সাইটেকডেইলি
Comments 1