বেডেলয়েড রটিফার (bdelloid rotifers) নামে পরিচিত আণুবীক্ষণিক বহুকোষী প্রাণী অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় টিকে থাকার দক্ষতার জন্য সুপরিচিত। তারা হিমাঙ্কের নিচে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের থেকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হিমায়িত হয়ে ৫-১০ বছর বেঁচে থাকার খবর হরহামেশাই পাওয়া গেছে। এখন, জীববিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল ২৪,০০০ বছর ধরে সাইবেরিয়ান পারমাফ্রোস্টে হিমায়িত বেডেলয়েড রটিফারকে সফলভাবে পুনরুদ্ধার করেছে।
প্রাকৃতিকভাবেই, স্থায়ী হিমশীতল আবাসস্থলগুলিতে কিছু জীব কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার বছর ধরে সংরক্ষণিত বা টিকে থাকতে পারে। উদ্ভীদ এবং এককোষী প্রাণীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নতুন নয়।
উদাহরণস্বরূপ, এক নমুনা থেকে দেখা গেছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে বরফে আচ্ছাদিত হয়ে থাকা এক হাজার বছরের পুরনো অ্যান্টার্কটিক মস (Antarctic moss) উদ্ভিত সফলভাবে পুনঃউৎপাদনসফলভাবে পুনঃউৎপাদন করতে সক্ষম।
তেমনিভাবে, ৩২,০০০ বছর পুরোনো পারমাফ্রস্ট (ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল) থেকে সংগৃহীত ক্যাম্পিয়ন (Campion) জাতের উদ্ভিতের বীজের টিস্যু থেকে পুরো উদ্ভিতটাই পুনরায় জন্মানো হয়েছিল। এবং উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়ার দুটি অঞ্চলের পারমাফ্রস্ট থেকে নেমাটোড বা সুতাকৃমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, পরে সেসবের কার্বন ডেটিং করে দেখা গেছে সেগুলা ৩০,০০০ বছর আগের।
রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ ফিজিকোমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিকাল প্রবলেমস ইন সয়েল সায়েন্স এর গবেষক ড. স্টাস মালাভিন বলেন,
“আমাদের প্রতিবেদনটি আজকের বিশ্বের সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ যে, বেডেলয়েড রোটিফার নামে পরিচিত বহুকোষী প্রাণী ক্রিপ্টোবায়োসিসের মাধ্যমে কয়েক হাজার বছর টিকে থাকতে পারে, প্রায় সম্পূর্ণ বিপাকের কাজ বন্ধ রেখেও।”
ড. মালাভিন এবং সহকর্মীরা রেডিওকার্বন-ডেটিং ব্যবহার করে নির্ধারণ করেছিলেন যে তারা সাইবেরিয়ান পারমাফ্রস্ট থেকে যেসব রোটিফার উদ্ধার করেছিলেন সেসব প্রায় ২৪,০০০ বছর বয়সী।
অণুবীক্ষণিক প্রাণীটি Adineta গোত্রের অন্তর্গত, এবং সমসাময়িক সময়ে বেলজিয়ামে সংগৃহীত Adineta vaga প্রজাতির সাথে শ্রেণীবন্ধ।
যখন সেই অণুবীক্ষণিক প্রাণীকে হিমায়িত পরিস্থিতি থেকে গলিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আনা হয় তখন তারা parthenogenesis নামে ক্লোন তৈরি করে প্রক্রিয়ায় নিজেদের বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।
এই প্রাচীন প্রাণীদের এরকম টিকে থাকার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে, গবেষকরা ল্যাবে রটিফারকে ঠান্ডা হিমশীতল করে পুনারায় গরম করেছেন তাদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করার জন্য।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনজীবনগুলোর ধীরে ধীরে হিমায়িত হওয়ার সময় বরফের স্ফটিক গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারার এক বিশেষ ম্যাকানিজম রয়েছে।
ড. মালাভিন বলেন,
“বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাপার হলো এক বহুকোষী জীবকে হাজার বছরের জন্য হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা যায় এবং তারপরে আবার প্রাণ ফিরে পাওয়া যায় – ব্যাপারটা অনেকটা সায়েন্স ফিকশনের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।”
“অবশ্যই জীবটি যত জটিল, সেটি হিমায়িত ভাবে সংরক্ষণের জন্য আরো জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর পক্ষে বর্তমানে এটি সম্ভব নয়।”
“তবুও, আমরা এমনটা আগে এককোষী জীবে দেখেছি। এখন এককোষী জীব থেকে অন্ত্র এবং মস্তিষ্ক সমৃদ্ধ বহুকোষী জীবে দেখে গেলো, যদিও ব্যাপারটা মাইক্রোস্কোপিক, তবুও বড় সাফল্যের দিকে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।”
“কয়েক বছর বরফের মধ্যে টিকে থাকতে কী লাগে তা এখনও পরিষ্কার নয়। হাজারে বছরে তো পরের কথা। এরকম প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন”
এরকম টিকে থাকার গল্পে প্রথমে এককোষী, এবার বহুকোষী। এরকম ভাবে গবেষনা চালিয়ে যেতে থাকলে হয়তো মানুষের মত জটিল প্রাণীকেও হিমায়িত করে হাজার হাজার বছন সংরক্ষণ করে যাবে।
এই দলের গবেষনা প্রত্রটি Current Biology জার্নালে ৭ই জুন ২০২১ এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণপত্র:
A living bdelloid rotifer from 24,000-year-old Arctic permafrost. Current Biology 31 (11): R712-R713; doi: 10.1016/j.cub.2021.04.077
Comments 2