বৃহস্পতি হলো আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম গ্রহ এবং পৃথিবীর অধিবাসীদের টিকে থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ৷ বৃহস্পতিকে নিয়ে তাই আগ্রহের অন্ত নেই। বৃহস্পতির বিভিন্ন রহস্য তার ভেতরেই লুকায়িত আছে সৌরজগতের সবচেয়ে শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ডের এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী রেডিয়েশন বেল্টের আড়ালে। আর এই বৃহস্পতির উৎপত্তি এবং বিকাশ নিয়ে জানার জন্য, রহস্যের পর্দা সরানোর জন্য নাসা তাদের জুনো (Juno) মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে ২০১১ সালের আগস্টের ৫ তারিখ। গ্রহটির কঠিন কোনো কেন্দ্র আছে কিনা, এর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ম্যাপ, এর গভীরের বায়ুমন্ডলে পানি আর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ আর অরোরা পর্যবেক্ষণের জন্যও এই মাহাকাশযান তৈরি করা হয়।

ক্রেডিট: NASA/JPL-Caltech
মহাকাশযানটি ২০১৬ এর ৪র্থ জুলাইয়ে বৃহস্পতিতে পৌছায় এবং এবছরের জুনের ৭ তারিখ, নাসার জুনো (Juno) মহাকাশযানটি বৃহস্পতির বরফাচ্ছন্ন এং সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ গ্যানিমেডের খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করে। গত দুই দশকে গ্যানিমেডের এতো কাছ দিয়ে কোনো মাহাকাশযান অতিক্রম করেনি। আর তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মাহাকাশযানটি ৩৪ তম বার বৃহস্পতি গ্রহ কে প্রদক্ষিণ করে।
নিচের এই অ্যানিমেশন ভিডিয়োতে জুনো এর প্রদক্ষিন করা প্রত্যকটা চিত্র ‘স্টারশিপ ক্যাপ্টেন’ পয়েন্ট অব ভিউতে দেখা যাবে।
সান আন্তোনিওর দক্ষিণ-পশ্চিম গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুনোর প্রধান তদন্তকারী স্কট বোল্টন বলেন, “অ্যানিমেশন ভিডিয়োটি দেখায় যে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান কতটা সুন্দর হতে পারে। অ্যানিমেশনটি আমাদের সৌরজগতকে অন্বেষণ করার কল্পনাকে চোখের সামনে দেখতে দেয়। বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা এবং সৌরজগতের বৃহত্তম এবং বরফের চাঁদদের পাশকাটিয়ে উঁড়ে যাওয়াটা কেমন হবে তা অনুধাবণ করতে সাহায্য করে। আজ, আমরা যখন পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে মহাকাশ পরিদর্শন করতে সক্ষম হওয়ার উত্তেজনাপূর্ণ সম্ভাবনার কাছে পৌঁছাচ্ছি। তখন এটি আমাদের কল্পনাশক্তিকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যখন মানুষ আমাদের সৌরজগতে ভিনগ্রহে ভ্রমণ করবে তার একটা অসাধারণ চিত্র চোখের সামনে তুলে ধরে। ”
৪ মিনিটের দীর্ঘ অ্যানিমেশনটি জুনো গ্যানিমেডের কাছাকাছি পৌঁছাবার পরে শুরু হয়, যেখানে ৬৭,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে পৃষ্ঠ থেকে ১,০৩৮ কিলোমিটার উপর দিয়ে উঁড়ে যায়। অ্যানিমেশনটি চাঁদের বেশ কয়েকটি অন্ধকার এবং আলোকিত অঞ্চল দেখায় (অন্ধকার অঞ্চলগুলি আশেপাশের বরফের নীচে নেমে আসে ফলে সৃষ্ট শূন্যতায় বলে মনে করা হয়)। পাশাপাশি গেনিমেডের সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বলতম গর্তের মধ্য অন্যতম, Tros কে দেখা যায়।
গেনিমেড এবং বৃহস্পতির মধ্যকার ১.১৪ মিলিয়ন কিলোমিটার যেতে জুনো প্রোবটির মাত্র ১৪ ঘন্টা ৫০ মিনিট সময় লেগেছে। এই মুহুর্তে, বৃহস্পতির শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষ মহাকাশযানটিকে গ্রহের তুলনায় প্রায় ২১০,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে এক্সেরালেট করেছে।