ইউরোপীয় রিসার্চ কাউন্সিলের অর্থায়নে অ্যাস্টেরোক্রোনোমেট্রি প্রকল্পের এক নতুন গবেষণা কীভাবে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি প্রাথমিক পর্যায়ে গঠিত হয়েছে, কীভাবে স্যাটালাইট গ্যালাক্সির সাথে একীভূত হয়েছিল তার সময়কালের সর্বোত্তম প্রমাণ সরবরাহ করে। প্রায় শতাধিক লাল দানব বা রেড জায়ান্ট নক্ষত্রের নমুনা সাথে জ্যোতির্বিদ্যায় তুলনামূলকভাবে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা আমাদের গ্যালাক্সির জন্য বর্তমানে সর্বাধিক সুনির্দিষ্ট বয়স হিসাব করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য এবং আগের অন্যান্য তথ্যের সাহায্যে, গবেষকরা প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর আগে Gaia Sausage বা Gaia Enceladus নামে পরিচিত প্রদক্ষিণকৃত স্যাটালাইট গ্যালাক্সির সাথে মিল্কিওয়ের একীভূত হওয়ার সময় কী ঘটছিল তা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণারটির সহ-লেখক এবং ওহাও স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর কসমোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোপার্টিকাল ফিজিক্সের সহযোগী ফাইরেঞ্জো ভিনসেঞ্জো বলেন, “আমাদের প্রাপ্ত তথ্য এবং বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণিত হয় যে যখন একত্রীকরণ ঘটেছিল, তখন মিল্কিওয়ে ইতিমধ্যে তারার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী গঠিত হয়ে গিয়েছিলো”
সেই “হোমমেড” বা পূর্বে গঠিত নক্ষত্রগুলির মধ্যে অনেক নক্ষত্র গ্যালাক্সির মাঝখানের thick disc চলে গিয়েছিলো। অন্যদিকে একীভূত হবার পর গাইয়া-এনসেলেডাস থেকে প্রাপ্ত বেশিরভাগ নক্ষত্র গ্যালাক্সির বাইরের দিকের galactic halo -তে গিয়েছিলো।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রনোমি ফেলো এবং গবেষনাটি নেতৃত্বদানকারী জোসেফিনা মন্টালবান বলেছেন, “গাইয়া-এনসেলেডাসের সাথে একীভূত যাওয়ার ঘটনাটি মিল্কিওয়ের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে মনে করা হয়।”
নক্ষত্রের বয়স গণনা করে গবেষকরা প্রথমবার নির্ধারণ করতে সক্ষম হন যে গাইয়া-এনসেলেডাস থেকে প্রাপ্ত নক্ষত্রগুলির মিল্কিওয়ের ভিতরে জন্ম নেওয়া বেশিরভাগ নক্ষত্রের তুলনায় সমান কিংবা কিছুটা কম বয়সী, বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।
ভিনসেঞ্জো বলেন, “দুটি গ্যালাক্সির মধ্যে এরকম এক সংঘর্ষের মাধ্যমে একীভূত হওয়া সবকিছুকে বেশ লন্ডভন্ড করা ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারে না।” গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে যে একীভূত প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যে গ্যালাক্সিতে থাকা নক্ষত্রগুলোর কক্ষপথকে পরিবর্তন করেছে, তাছাড়া নক্ষত্রগুলীকে আরও অদ্ভুতস্বভাবের গড়ে তুলেছে।
ভিনসেঞ্জো নক্ষত্রের গতিবিধিগুলি একটি নাচের সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে প্রাক্তন গাইয়া-এনসেলেডাসের নক্ষত্রগুলি মিল্কিওয়ের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী নক্ষত্রের চেয়ে আলাদাভাবে ভাচে নাচে। এমনকি নক্ষত্রগুলি আলাদা “পোশাক” পড়ে আছে। ভিনসেঞ্জো বলেন, “বাইরে থেকে আসা নক্ষত্রগুলি মিল্কিওয়ের ভিতরে জন্মগ্রহণকারী নক্ষত্রগুলি থেকে ভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রন দেখা গেছে।”
গবেষকরা তাদের গবেষনা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি এবং তথ্যের উৎস ব্যবহার করেছেন।
গবেষকরা নক্ষত্রের এইরকম সুনির্দিষ্ট রয়স বের করে উঠতে পেরেছিলেন তার একটি উপায় ছিল গ্রহাণুবিজ্ঞান বা asteroseismology এর ব্যবহারের মাধ্যমে। গ্রহাণুবিজ্ঞান তুলনামূলকভাবে নতুন ক্ষেত্র যা তারার অভ্যন্তরীণ কাঠামোর অনুসন্ধান করে।
ওহাও স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের পোস্টডক্টোরাল এবং গবেষণা সহযোগী ম্যাথিউ ভার্ড বলেন যে, “গ্রহাণুবিজ্ঞানীরা তারাগুলিতে নড়াচরা নিয়ে গবেষণা করেন, যেগুলো মূলতঃ ভেতর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় যাওয়া তরঙ্গ।”
ভার্ড আরো বলেন, “এটি আমাদেরকে খুব সুনির্দিষ্টভাবে নক্ষত্রের বয়স বের করতে সাহায্য করে, যা প্রাথমিক মিল্কিওয়েতে ঘটনাগুলি কখন ঘটেছিল তার কালানুক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
গবেষণায় Apache Point Observatory Galactic Evolution Experiment (APOGEE) নামের বর্ণালিবীক্ষণ জরিপ বা spectroscopic survey এর তথ্য ব্যবহৃত হয়েছিল, যা তারার রাসায়নিক সংমিশ্রণ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে – যা বয়স নির্ধারণের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক।
মন্টালবান বলেন, “নক্ষত্রের বয়স নির্নয়ে আমরা spectroscopic সাথে মিলিত হয়ে গ্রহাণুবিজ্ঞানের দুর্দান্ত এক সম্ভাবনা দেখিয়েছি।”
গবেষকদের মতে এই গবেষণাটি নতুন ক্ষেত্রর প্রথম পদক্ষেপ মাত্র।
ভিনসেঞ্জো বলেন, “আমরা এখন নক্ষত্রের বড় নমুনায় এই পদ্ধতিকে প্রয়োগ এবং ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকক্ট্রার মতো আরও সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”
“এটি শেষ পর্যন্ত মিল্কিওয়ে গঠনের ইতিহাস এবং বিবর্তনের আরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির দিকে পরিচালিত করবে এবং আমাদের গ্যালাক্সির কীভাবে বিকাশ হয়েছিল তার একটি সময়রেখা তৈরি করবে।”
গবেষনার ফলাফল ১৭মে, ২০২১ সালে নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা পত্র: Chronologically dating the early assembly of the Milky Way. Nature Astronomy, (2021)
DOI: 10.1038/s41550-021-01347-7
সুত্র: ওহাও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়
নিচের ভিডডওটি দেখা যেতে পারে। ২০১৯ সালের এক গবেষণার ভিজ্যুয়ালাইজড
Comments 1