১৩০৬টি পা বিশিষ্ট বিশ্বের প্রথম প্রকৃত “মিলিপেড” -এর সন্ধান পাওয়া গেল অস্ট্রেলিয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া প্রদেশের একটি খনি অঞ্চলে ভূগর্ভ থেকে ৬০ মিটার নীচে এই প্রাণীটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
বেশিরভাগ ভূগর্ভস্থ প্রাণীর মতোই এই প্রাণীটিও চোখবিহীন, বিবর্ণ। এটি ৯৫ মিলিমিটার লম্বা। এদের শরীর ৩৩০টি আলাদা-আলাদা খন্ড নিয়ে তৈরি।
এখনও অবধি বিজ্ঞানীদের ধারণা এই প্রাণীটি মূলত ছত্রাক খেয়ে বেঁচে থাকে।
প্রাণীটির বিজ্ঞাসম্মত নামকরণ করা হয়েছে Eumillipes persephone.
মিলিপেড কথার অর্থই হলো সহস্রপদ বা ১০০০ পদ বিশিষ্ট প্রাণী। সেজন্য বৈজ্ঞানিক নামটিও নেওয়া হয়েছে ল্যাটিন ভাষায় প্রকৃত ১০০০ পদ বোঝানো শব্দ Eumillipes থেকে। persephone হলেন গ্রীক পুরাণের পাতালের দেবী।
এতদিন ধরে মিলিপড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পদবিশিষ্ট যে প্রাণীটির কথা বিজ্ঞানীদের জানা ছিল তার বৈজ্ঞানিক নাম Illacme plenipes, ৭৫০ পদবিশিষ্ট এই প্রাণীটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে পাওয়া যায়।

ক্রেডিট: P. Marek এবং বাকিরা (Scientific Reports)
গবেষণাপত্রটি ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে “Scientific Reports” নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মুখ্য গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার পতঙ্গবিদ পল মারেক, সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কে জানান, “এতদিন অবধি কোনও মিলিপড হিসেবে পরিচিত প্রাণীর ১০০০ টি পা ছিলনা, যদিও মিলিপড কথার অর্থ হলো ১০০০টি পা“।
খনি অঞ্চলের পরিবেশের ওপর খননকার্যের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে আসা দলটি মাটি খননের সময় ১৫ মিটার থেকে ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মোট ৮টি মিলিপেডের সন্ধান পেয়েছে। তার মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী মিলিপেডের ১৩০৬টি পা এবং আরেকটির ৯৯৮টি পা রয়েছে। ২টি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মিলিপেডের একটির ৮১৮ এবং অপরটির ৭৭৮টি পা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বেনেলঙ্গিয়া এনভায়রনমেন্টাল কনসালট্যান্টস্-এর তরফে ডা. ব্রুনো বুজাটটো জানান, “এই প্রাণীটি সত্যিই অতি বিচিত্র এক প্রাণী। যখনই আমি তাদের দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে অবগত হলাম, তখনই বুঝেছিলাম এদের মধ্যে কিছু একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছেই। অস্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য এখনও বেশিটাই অজানা রয়ে গিয়েছে।”
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত পতঙ্গ বিশারদ ডা. জুয়ানিতা রডরিগেজ জানান, “নতুন এই প্রজাতিটি মাটির নীচে সহজে চলাফেরার জন্য অভিযোজিত হয়ে লম্বা হয়েছে। লম্বা বেশি হলে এদের শরীর ভূগর্ভে চলাফেরার জন্য বেশি করে বল প্রয়োগ করতে পারে পরিপার্শ্বের ওপর। সেইজন্য এরা পাথরের গুহা, খাঁজ ইত্যাদির ভেতর সহজে চলাফেরা করতে পারে। মিলিপেডস দের বহু প্রজাতি গুহাতে বা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে এবং বিভিন্ন পচে যাওয়া জৈব পদার্থ, ঝরা পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা এই মিলিপেড থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি, এর মধ্যে কোনো প্যথজেন বা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করার মতো অণুজীব প্রতিরোধক রয়েছে কি না খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে।”
জানামতে বর্তমানে পৃথিবীতে ২০০০ এর মত মিলিপেড প্রজাতি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর ৪০০০ এরও বেশি প্রজাতি থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় পর্তুগীজ মিলিপেড প্রজাতি যার শরীরে সাধারণত ২৫ টি খণ্ড থাকে। ২০১৩ সালে পার্থ শহরে একটি ট্রেন দুর্ঘটনার জন্যেও এদের দায়ী করা হয়।
সেন্টিপেড এবং মিলিপেড প্রজাতির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো সেন্টিপেড প্রজাতির প্রতিটি দেহখণ্ডে একজোড়া পা থেকে, অপরপক্ষে মিলিপেড প্রজাতির প্রতিটি দেহখণ্ডে ২ জোড়া করে পা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
গবেষণাপত্র: The first true millipede—1306 legs long, Scientific Reports (2021).
DOI: 10.1038/s41598-021-02447-0
[url=https://misoprostol.monster/]can you buy misoprostol over the counter[/url]