ট্রপিক্যাল জঙ্গল থেকে এন্টার্কটিকা; পর্বতচূড়া থেকে গভীর সমুদ্র; টার্ডিগ্রেড এমন একটি জীব, যাকে এই পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। এক্সট্রিম রেডিয়েশন, ভলকানিক লাভা, বায়ুশূন্যতা ইত্যাদি অনেক কিছুই এদের প্রাণ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই টার্ডিগ্রেডপর্বের (Tardigrada) প্রজাতিগুলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল জীবগুলোর একটি ধরা হয়।


টার্ডিগ্রাডা পর্বের সবচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্ম পাওয়া যায় ক্রিটেসিয়াস পর্বের (Cretaceous period) অ্যাম্বার থেকে। প্রায় ৮ কোটি বছর পুরোনো সেই টার্ডিগ্রেডকে বর্তমান টার্ডিগ্রেডদের সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টার্ডিগ্রেড এমন একটা প্রাণী যারা ৫টা মাস এক্সটিঙ্কশন ইভেন্ট সফলভাবে পার করেছে। কিন্তু, বিচিত্র ও বিশাল বৈবর্তনিক ইতিহাস ও পৃথিবীময় বিচরণ শর্তেও তাদের ফসিল রেকর্ডে অনেক ঘাটতি ছিল। মাত্র আধা মিলিমিটার লম্বা মাইক্রোস্কোপিক এই প্রাণির সাইজের কারণে এর ফসিল রেকর্ড খুবই বিরল। এমনকি, আজ পর্যন্ত মাত্র ৪টি টার্ডিগ্রেডের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে যাদের মধ্যে মাত্র ৩টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করে নামকরণ করা গেছে।
নিউ জার্সি ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং ইভলিউশনারি বায়োলজিস্ট, ফিলিপ বারডেন তাঁর দল গত ৫ অক্টোবর জার্নালে একটি পেপার পাবলিশ করেন, যেখানে সম্প্রতি পাওয়া দেড় কোটি বছর পুরোনো টার্ডিগ্রেড ফসিলটি সম্পর্কে বলা হয়েছে।ডমিনিকান রিপালকিক থেকে পাওয়া নতুন এই ফসিলটি Terdigrada পর্বের সম্পূর্ণ নতুন একটি গণ ও প্রজাতি নির্দেশ করে। এর নামকরণ করা হয়েছে Paradoryphoribius chronocaribbeus. টার্ডিগ্রেডের কিউটিকল কাইটিন দ্বারা তৈরি বলে এর ফ্লোরোসেন্ট বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই ফসিলটির উচ্চ রেজুলেশনের ছিবি নিতে পেরেছেন গবেষকরা। এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া ৪টি টার্ডিগ্রেড ফসিলের মধ্যে সবচেয়ে তথ্যবহুল। এই ফসিলটির মাধ্যমেই প্রাচীন টার্ডিগ্রেডের অভ্যন্তরীণ গঠন বা ইন্টারনাল মোরফোলজি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারলাম আমরা।


“আমরা এখনো টার্ডিগ্রেডদের সম্পর্কে খুবই কম জানতে পেরেছি; হোক জীবিত কিংবা প্রাচীন।” একটি আর্টিকেলে বলেছেন ফিলিপ। “ঠিক যেমন ভাবে, জীবিত অনেক প্রাণি সম্পর্কেই এখনো খুব বেশি জানতে পারিনি আমরা।”
গবেষণাপত্র: A tardigrade in Dominican amber, Proceedings of the Royal Society B (2021).