“এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স” বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া, ডোজ সম্পুর্ন না করা এসব কারণে ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, প্রচলিত ঔষধে আর রোগ ভাল হচ্ছে না।
এমন অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে নতুন কোনো উপায় বের করতে হবে। তৈরি করতে হবে নতুন সমর কৌশল। আর হয়তো তেমন কিছুরই সন্ধান দিতে যাচ্ছে University of Geneva এর একদল বিজ্ঞানীর সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন গবেষণা।
Pseudomonas aeruginosa নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া; বেশ সুবিধাবাদী ব্যাকটেরিয়া। মানুষের দেহে দীর্ঘস্থায়ী রোগ তৈরি করতে পারে যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে এসব রোগের চিকিৎসা করাও অনেক কঠিন। ফলে এখন এর জন্য নতুন এন্টিবায়োটিক তৈরি জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। University of Geneva, UNIGE এর একদল গবেষক এই ব্যাকটেরিয়ায় একটা নতুন জিন এক্সপ্রেশন রেগুলেটর খুজে পেয়েছেন, যেটি না থাকলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ক্ষমতা একেবারে কমে যায়।
আরো পড়ুন: চীনে খোঁজ মিললো দানবাকৃতির গণ্ডারের নতুন জীবাশ্মের
আরএনএ-হেলিকেজ, যেটা একধরনের প্রোটিন এবং এনজাইম, মানুষ, উদ্ভিদ, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া সব ধরনের কোষেই এটি উপস্থিত থাকে। প্রজাতি এবং কোষ ভেদে এর কাজও ভিন্ন ভিন্ন। pseudomonas aeruginosa ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এর বিশেষ ভুমিকা পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, হোস্ট দেহে রোগ সৃষ্টিতে এটি কাজ করে। সেটা পরীক্ষা করার জন্য Galleria mellonella নামক এক প্রজাতির মথের লার্ভার ওপর পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল হল, স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ৮০% এর বেশি লার্ভা মারা যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার আরএনএ-হেলিকেজ একটু মডিফাই করা হলে সেই লার্ভাগুলোর ৯০% এর বেশি বেঁচে থাকে!
এই গবেষণা আমাদের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি নতুন কৌশলের কথা বলছে। সেটা হল, আমরা এখন শুধু জীবাণু মেরে ফেলার ওপরই জোর দিই। আমাদের প্রচলিত এন্টিবায়োটিকগুলো এভাবেই কাজ করে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বাঁচিয়ে রেখে তাদের রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়াও একটা ভাল উপায় হতে পারে।
এই গবেষণা দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মার্টিনা ভ্যালেন্টিনি বলেছেন, ” বস্তুত, এই প্রোটিন কিছু মেসেঞ্জার- আরএনএ’র বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।”
তিনি আরো বলেন, ” এই নতুন এন্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ স্ট্র্যাটেজির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটি জীবাণুদের সম্পুর্ন মেরে ফেলার চেষ্টার বদলে জীবাণুর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া, যাতে করে পোষক দেহের ইমিউন সিস্টেম স্বাভাবিক থাকে এবং জীবাণুদের স্থায়ীভাবে রেসিস্ট্যান্ট হওয়ার ঝুকি কমানো যায়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যখন জীবাণদের মেরে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, তখনও জীবাণুরা নিজের টিকিয়ে রাখার জন্য অভিযোজিত হয় যেটা ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট স্ট্রেইন উদ্ভবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।”
এই গবেষণা গত ২১ জুন বিখ্যাত জার্নাল
“Nucleic Acid Research” এ প্রকাশিত হয়।
গবেষনা পত্র: The DEAD-box RNA helicase RhlE2 is a global regulator of Pseudomonas aeruginosa lifestyle and pathogenesis, Nucleic Acids Research (2021)
DOI: 10.1093/nar/gkab503