শুনেছেন কখনো এমন আজগুবি কথা? পুরুষ কখনো প্রেগন্যান্ট হয়? বাচ্চা দেয়? না, দেয় না। আমাদের চেনা পরিচিত কোনো প্রাণীরই এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। শুধু সি-হর্স ও পাইপফিশের মত একদল মাছের মাঝে এই দুর্লভ ব্যাপারটা দেখা যায়। কিন্তু স্তন্যপায়ীদের মত উন্নত জীবে এরকম বৈশিষ্ট্য একদমই অনুপস্থিত।
এই অসম্ভব ঘটনাটিই ল্যাবরেটরিতে ঘটিয়েছেন চীনের একদল বিজ্ঞানী, সাথে উসকে দিয়েছেন নতুন বিতর্ক।
গত ১০ জুলাই, bioRxiv এ চীনের সাংহাইয়ের নেভাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণাটির প্র-প্রিন্ট প্রকাশিত হয়।
প্রথমেই পুরুষ ইঁদুরের খোঁজাকরণ (castration) করা হয়। তারপর স্ত্রী ইঁদুরের সাথে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশে জোড়া লাগিয়ে রক্ত আদান-প্রদান করা হয়৷ এই প্রক্রিয়াকে প্যারাবিয়ন্ট (parabiont) বলে। এর ছয় সপ্তাহ পরে দেখা যায় পুরুষ ইঁদুরটির টেস্টোস্টেরন একেবারে কমে গিয়েছে, কিন্তু অ্যাস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টোরন লেভেল অনেকটাই স্ত্রী ইঁদুরের কাছাকাছি। আট সপ্তাহ পরে পুরুষ ইঁদুরের দেহে জরায়ু ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। জরায়ু স্থাপনের আরো আট সপ্তাহ পর জরায়ুতে ভ্রুণ স্থাপন করা হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ গর্ভকালীন সময় পার করার পর সিজারিয়ান সেকশনে সিজারের মাধ্যমে নতুন বাচ্চার ডেলিভারি করা হয়।


ক্রেডিট: Rongjia Zhang, Yuhuan Liu
মোট ৪৬ টি পুরুষ ইঁদুরে ২৮০ টি ভ্রুণ স্থাপন করা হয়, তারমধ্য থেকে মাত্র ১০ টি ইঁদুর পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিল, অর্থাৎ সফলতার হার মাত্র ৪%।
পুরো ব্যপারটা নিয়ে বিজ্ঞান মহলে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। চীনের টুইটার খ্যাত মাইক্রোব্লগিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Weibo তে সম্প্রতি টপ ট্রেন্ডিং টপিক এটি।
চাইনিজ একাডেমি অব সোশাল সায়েন্স এর বায়োএথিসিস্ট কিউ রেনজং বলেন,” এই গবেষণার কোনো সামাজিক মূল্য নেই, এটি ট্যাক্স প্রদানকারী জনগনের টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।”
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট এর সোশিওলজিস্ট জয় ঝ্যাং বলেন, “এরকম বিতর্কিত গবেষণাগুলো চীনের বিজ্ঞান জগতের ছবিতে যে কালো দাগ আছে, তা আরো গভীর করতে পারে।”
উল্লেখ্য গত কয়েক বছরে এরকম বেশ কিছু বিতর্কিত গবেষণা প্রকাশিত হয় চীন থেকে। ২০১৮ সালে চীনের এক গবেষক প্রথমবারের মত জিনোম-এডিটেড বেবির জন্ম দেন, যেটি সেসময় প্রচুর সমালোচিত হয়েছিল।
“এখানে আরো গভীর উদ্বেগের ব্যাপার রয়েছে”, বলেন জয় ঝ্যাং। ” গবেষনার জন্য এরকম অদ্ভুতুরে বিষয়গুলো বেছে নিয়ে শর্টকাটে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের এই মানসিকতা বিজ্ঞানকে এর একাডেমিক ও দায়িত্বশীলতার স্থান থেকে সস্তা বিনোদনের ব্যাবসার মাধ্যমে পরিণত করতে পারে। “
এই গবেষণা অবশ্য আমাদের বেশ কিছু নতুন জিনিসও জানাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত গবেষক ক্রিস ও’নেইল বলেন,”এটা স্ত্রী- গর্ভধারণের একটি কার্যকরী ex-vivo মডেল।”
তিনি আরো বলেন, ” এই গবেষণা আরো বলে যে অন্তত খোঁজাকৃত পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষদেহের পরিবেশ একটি ভ্রূন বহনে মূলত কোনো বাঁধার সৃষ্টি হয় না।”
আরো একটি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে এই গবেষণা। ভবিষ্যতে হয়তো যেকোনো লিঙ্গের মানুষই চাইলে বাচ্চা ধারণ করতে পারবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে ইতোমধ্যেই ভাবনা শুরু হয়েছে। তবে এই গবেষণার গবেষকেরা বলেছেন, মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষের গর্ভধারণ এখনো ভাববার মত পর্যায়ে আসে নি। এই গবেষণার তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কোনো পুরুষ মানুষের গর্ভধারণ হবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার সমান।
বিতর্কীত গবেষণাপত্রের প্রি-প্রিন্ট: A rat model of pregnancy in the male parabiont, bioRxiv (2021)
DOI: 10.1101/2021.06.09.447686