কোয়ান্টাম মাইক্রোস্কোপ তৈরি করলো গবেষকরা যা দিয়ে অসম্ভবকেও দেখা যাবে!

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি কোয়ান্টাম মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছেন যা দিয়ে এমন সব জৈবিক কাঠামো দেখতে পারা যায় যা অন্যকোনো মাইক্রোস্কোপে দেখা অসম্ভব।

এই আবিষ্কারটি বায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রগুলোর বিভিন্ন কাজের জন্য পথ আরো সুগম করে দিবে এবং নেভিগেশন থেকে মেডিক্যাল ইমেজিং পর্যন্ত এক নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে।

মাইক্রোস্কোপটি কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট দ্বারা পরিচালিত, এটাকে আইনস্টাইন “দূরে থেকে ভুতুড়ে পারস্পরিক ক্রিয়ার” হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

UQ (University of Queensland)-এর কোয়ান্টাম অপটিক্স ল্যাব এবং এআরসি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর ইঞ্জিনিয়ারড কোয়ান্টাম সিস্টেমস (ইকিউএস) থেকে অধ্যাপক ওয়ারউইক বোয়েন বলেছেন, এটিই প্রথম এন্টেঙ্গেলমেন্ট-ভিত্তিক সেন্সর যার কর্মক্ষমতা বর্তমানে বিদ্যমান সর্বোত্তম প্রযুক্তিরও বাইরে।

অধ্যাপক ওয়ারউইক বোয়েন বলেছিলেন,

“এই অগ্রগতিটি সব ধরণের নতুন প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেবে – উন্নততর নেভিগেশন সিস্টেম থেকে শুরু করে আরও ভাল এমআরআই মেশিনে, যেটাই বলেন না কেন। এন্টেঙ্গেলমেন্ট বিষয়টি কোয়ান্টাম বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। আমরা শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছি যে এটি বিদ্যমান নন-কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে ব্যবহারকরে তৈরিকৃত সেন্সরগুলিকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ — এটা পরিবর্তনের সম্ভাবনার প্রথম প্রমাণ।”

আরো পড়ুন: ছুড়ে ফেলা গ্রহে তিন দশক পর যাত্রা!

অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাম টেকনোলজিস রোডম্যাপ এই কোয়ান্টাম সেন্সরগুলিকে স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল, পরিবহন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের এক নতুন দিগন্ত উনমোচন করে বলে মনে করে।

দলের কোয়ান্টাম মাইক্রোস্কোপের একটি বড় সাফল্য হলো ঐতিহ্যগত আলোক-ভিত্তিক মাইক্রোস্কোপিতে একটি ‘কঠিন বাধা’ কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা।

অধ্যাপক বোয়েন বলেন,

“বিদ্যমান সেরা আলোক-ভিত্তিক মাইক্রোস্কোপগুলি উজ্জ্বল লেজারগুলি ব্যবহার করা হয় যা সূর্যের চেয়ে কয়েক বিলিয়ন গুণ বেশি উজ্জ্বল। মানব কোষের মতো ঠুনকো জৈবিক উপাদান সেই অবস্থায় তাদের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য বেঁচে থাকতে পারে এবং এই ব্যাপারটি বড় গবেষণার জন্য একটি বড় বাঁধা। আমাদের এ কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গমেন্ট মাইক্রোস্কোপ কোষ ধ্বংস না করে ৩৫ শতাংশ উন্নত স্পষ্টতা প্রদান করে, যা আমাদেরকে এমন জৈবিক কাঠামো দেখতে দেয় যা অন্য কোনো মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা অসম্ভব। এখানে এর সুবিধাগুলি বেশ সুস্পষ্ট – জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও ভাল বোঝা থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তির উন্নত করার ক্ষেতে কাজে লাগবে বৈকি।”

অধ্যাপক বোয়েন আরো বলেছেন,

“এই প্রযুক্তিতে কোয়ান্টাম জড়িয়ে যাওয়ার এর সম্ভাব্যতার সীমাহীন সুযোগ রয়েছে। এনট্যাঙ্গমেন্ট কম্পিউটার, যোগাযোগ এবং সেন্সিং -এ বিপ্লব ঘটাচ্ছে। প্রচলিত প্রযুক্তি টপকো নিখুঁত এবং একেবারে সুরক্ষিত যোগাযোগের ক্ষেত্র হিসেবে কোয়ান্টামের সুবিধার প্রথম প্রদর্শন হিসাবে কয়েক দশক আগেই প্রদর্শিত হয়েছিল। কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনও সম্ভাব্য প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে দ্রুত এবং নিখুঁত সুবিধার প্রথম প্রদর্শন হিসাবে গুগল বছর দুয়েক আগেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারিং প্রদর্শন করেছিল। ধাঁধার শেষ অংশটি এ সেন্সরিং ছিল এবং আমরা এখন সেই ফাঁক বন্ধ করে দিয়েছি। এখন এটি বিস্তৃত প্রযুক্তিগত বিপ্লবের জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।”

গবেষণা নেচারে প্রকাশিত হয়।

গবেষণা পত্রটি:
Quantum-enhanced nonlinear microscopy, Nature (2021). DOI: 10.1038/s41586-021-03528-w, www.nature.com/articles/s41586-021-03528-w

সুত্র: University of Queensland