তাপমাত্রারও কি সীমা থাকতে পারে? সর্বনিম্ন কত তাপমাত্রা পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব?
রবার্ট বয়েল পরম শুণ্য তাপমাত্রার ধারণা দেন যেটি সেলসিয়াস স্কেলে -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০ কেলভিন স্কেলে ০ কেলভিন এর সমান। থার্মোডাইনামিক স্কেলে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কিন্তু বাস্তবিক জগতে পরম শূণ্য তাপমাত্রা অর্জন অসম্ভব।
তাপমাত্রা হলো পদার্থের অণুসমূহের আণবিক কম্পনের একটি পরিমাপ; অণুসমূহের কম্পন বা গতিশক্তি বৃদ্ধির সাথে সমানুপাতিক একটি রাশি। পরম শুণ্য তাপমাত্রায় হিসেব মতে অণু সমূহের কম্পন একদমই থেমে যাবে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ শক্তি শূণ্য হবে। তবে সম্পূর্ণ গতিশক্তি সরিয়ে ফেলা কখনোই সম্ভব নয় তাই বাস্তবে পরম শূণ্য তাপমাত্রা অর্জন এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি।

ছবি: APS/Alan Stonebraker
গবেষকরাও হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত গবেষকগণ সর্বনিম্ন ৩৮ পিকোকেলভিন অব্দি পৌঁছাতে পেরেছেন।
সাম্প্রতিককালে জার্মানীর ইউনিভার্সিটি অব ব্রিমেন এর একদল পদার্থবিদ ১২০ মিটার উঁচু টাওয়ার থেকে একটি গ্যাস নিক্ষেপ করেন এবং তার চুম্বকক্ষেত্র অনবরত পরিবর্তনের মাধ্যমে অণুসমূহকে প্রায় গতিশূণ্য অবস্থায় নিয়ে আসেন। এসময় ২ সেকেন্ডের জন্য উক্ত তাপমাত্রা অর্জিত হয়।
গবেষকদল পদার্থের পঞ্চম দশা, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (গ্যাসের একটি অবস্থা যা কেবল অতি শীতল তাপমাত্রায় বর্তমান) এর কোয়ান্টাম প্রোপারটিস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। বিইসি (বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট) দশায় সম্পূর্ণ বস্তু একটি বড় পরামণুর ন্যায় আচরণ করে।
জার্মান গবেষকগণ একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে চৌম্বক ক্ষেত্রে আটকে থাকা রুবিডিয়াম (একটি রূপালী-সাদা ধাতব উপাদান) এর এক লক্ষ পরমাণুর একটি মেঘ শীতল করে বিইসি দশায় নেয়ার চেষ্টা করেন। পরম শূণ্য তাপমাত্রার যত নিকটে বস্তু আসতে থাকে, ততই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে থাকে। যেমন: আলো তরলে পরিণত হয় এবং তাকে পাত্রে ভরে রাখা সম্ভব (ন্যাচার ফিজিক্স জার্নালে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী)। নাসার ল্যাবরেটরিতে গবেষকগণ পরম শীতল তাপমাত্রায় একটি পরমাণুর একই সঙ্গে দুই জায়গায় উপস্থিতি লক্ষ্য করেন।
জার্মান গবেষণা দলের কথায় ফিরে আসি। তারা ভ্যাকুয়াম চেম্বারে পরম শূন্যের উপরে একটি ডিগ্রি সেলসিয়াসের প্রায় ২ বিলিয়ন ভাগ অব্দি তাপমাত্রা নামিয়ে আনেন (যা তখনই স্বয়ং একটি বিশ্বরেকর্ড হতে )। কিন্তু এটি গবেষকদের জন্য যথেষ্ট ছিল না, তারা পদার্থবিজ্ঞানের সীমা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। ভ্যাকুয়াম চেম্বারকে ফ্রি ফলের মধ্যে ফেলে দিয়ে দ্রুত চৌম্বক ক্ষেত্রটি চালু এবং বন্ধ করার সময়, বিইসি কে মাধ্যাকর্ষণ ছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে ভাসতে দিয়ে, তারা রুবিডিয়াম পরমাণুর আণবিক গতিকে প্রায় শূন্য করে দেয়। ফলস্বরূপ বিইসি প্রায় ২ সেকেন্ডের জন্য ৩৮ পিকোকেলভিন (যা শূণ্য কেলভিন থেকে এক ডিগ্রির ৩৮ ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ উপরে) তাপমাত্রা তৈরি করে।গবেষকরা লিখেছেন, “একটি চৌম্বকীয় লেন্সের সাথে একটি বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (BEC) কে মিলিত করে, আমরা একটি টাইম-ডোমেইন ম্যাটার-ওয়েভ লেন্স সিস্টেম তৈরি করি, যেখানে ফোকাস লেন্সের বিভব দ্বারা নিয়ন্ত্রণীয়। ফোকাসকে অসীমে সেট করে পারটিকেলের মোট অভ্যন্তরীণ শক্তি বা তাপমাত্রাকে ৩৮পিকোকেলভিন নামানো হয়।”
যদিও পরীক্ষাটি মাত্র দুই সেকেন্ড পর্যন্ত এই রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, সিমুলেশন বলে যে এটি একটি স্যাটেলাইটের মধ্যে থাকা ওজনহীন পরিবেশে ১৭ সেকেন্ড পর্যন্ত বজায় রাখা সম্ভব। ম্যাসাচুসেটসের স্মিথ কলেজের একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ কার্টনি ল্যানার্ট বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার অর্জন।”
মহাকাশের মাইক্রোগ্রাভিটিকে পরীক্ষাগারে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে প্রায় অসম্ভব ঘটনা পৃথিবীতেই ঘটানো সম্ভব – পরীক্ষণটি এর পক্ষে একটি জোরালো প্রমাণ।
মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম প্রাকৃতিক স্থান হল বুমেরাং নীহারিকা, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৫ হাজান আলোকবর্ষ দূরে সেন্টোরাস নক্ষত্রের পরিবারে অবস্থিত। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মতে এর গড় তাপমাত্রা -২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (প্রায় ১ কেলভিন)।
গবেষণাপত্র:
Collective-Mode Enhanced Matter-Wave Optics, Physical Review Letters (2021).
DOI: 10.1103/PhysRevLett.127.100401
তথ্যসুত্র:
University of Bremen (Universität Bremen)
Physics
Livescience
Well organised information, beautifully written. Job well done! ✨
ভালো লিখেছেন।