সংকেত প্রবাহ, বিপাক ক্রিয়াসহ নানাবিধ জৈবিক কাজে ইউবিকুইটিন নামক ক্ষুদ্র একটি প্রোটিনের ভূমিকা ইতোপূর্বেই জানা ছিল। কিন্তু জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব কলোগনি এর CECAD (Cluster of Excellence for Aging Research) গবেষণা কেন্দ্রের প্রফেসর ড.ডেভিড ভিলচেজ ও তাঁর সহকর্মীরা সম্প্রতি বয়স বৃদ্ধি তথা বার্ধক্যকরণ প্রক্রিয়ায়ও এই প্রোটিনের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
Caenorhabditis elegans নেমাটোডা পর্বের অন্তর্গত একটি কৃমিজাতী প্রাণী, যা বার্ধক্য বিষয়ক গবেষণার কাজে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এই কৃমির বার্ধক্যকরণ প্রক্রিয়ায় তাঁরা ইউবিকুইটিন নামের প্রোটনের উপস্থিতিযুক্ত জায়গাগুলোর সূক্ষ্ম পরিমাণগত বিশ্লেষণ করেছেন। এই প্রক্রিয়ার নাম “ইউবিকুইটিন প্রোটোমিকস” (ubiquitin proteomics); যেখানে কোষের বিভিন্ন প্রোটিনের সাথে ইউবিকুইটিনের সংযোগস্থলগুলোতে (ubiquitination) সংঘটিত পরিবর্তনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত ডেটায় স্থানভেদে ইউবিকুইটিনের পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়। সমগ্র কোষের প্রোটিন কনটেন্টের মধ্যকার একটি আন্তঃতুলনা থেকে কোন পরিবর্তনগুলো কোষের বার্ধক্যকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত প্রোটিন নবায়নাদি কাজে কার্যকর ভূমিকা রাখে তা দেখা যায়। এভাবে বিজ্ঞানীরা বিস্তৃত ডেটার একটি তালিকার মাধ্যমে বার্ধক্যকরণ এবং যৌবন দীর্ঘায়নের বিষয়টি বোধগম্যভাবে তুলে ধরেছেন এবং এখান থেকেই বার্ধক্যকরণ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ নতুন একটি নিয়ামকেরও খোঁজ দিয়েছেন। নেচার জার্নালে ‘Rewiring of the ubiquitinated proteome determines aging in C. elegans‘ শিরোনামে গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
ডাঃ সেদা কোয়েঙ্কু গবেষণাটির প্রধান সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য অনুসারে, বয়োবৃদ্ধি প্রক্রিয়া হাজারো প্রোটিন অণুর ইউবিকুইটিনেশনের পরিবর্তন সংঘটিত করে। খাদ্যগ্রহণ, দেহের ইনসুলিন সিগন্যালিং প্রভৃতির স্বল্পমাত্রা এই পরিবর্তনগুলো ঠেকিয়ে দিতে পারে।
গবেষকরা দেখেছেন, বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে নির্দিষ্ট হারে ইউবিকুইনেশন তথা বিভিন্ন প্রোটিন অণুর সাথে ইউবিকুইটিনের সংযোগগুলোর সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। কিছু এনজাইম বয়োবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতি সক্রিয় ভূমিকা রাখে, মূলত সেগুলোর ক্রিয়াতেই এই বিচ্ছিন্নকরণ ঘটে।
প্রোটিজমকে কোষের গার্বেজ ট্রাক বলা হয়, সাধারণত ইউবিকুইনেটেড প্রোটিনগুলো এর দ্বারাই শনাক্তকৃত এবং ধ্বংস হয়। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, প্রোটিজমের দ্বারা গাঠনিক ও বিভিন্ন কার্যনিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিনগুলোর ক্ষয়ের ফলে সংঘটিত বয়োবৃদ্ধিজনিত পরিবর্তনগুলোর মাধ্যমেই জীবের আয়ু নির্ণীত হয়।
গবেষণায় তাঁরা এমন কিছু প্রাণিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন যাদের দেহকোষে ত্রুটিযুক্ত প্রোটিজম বিদ্যমান। এর উদ্দেশ্য ছিল এমন প্রোটিনগুলোকে শনাক্ত করা যেগুলো বয়োবৃদ্ধির সাথে তুলনামূলক কম হারে ইউবিকুইনেটেড হয় এবং প্রোটিজমের দ্বারা শনাক্ত কিংবা ধ্বংস হয় না। এভাবে প্রোটিন জমা হওয়ার চূড়ান্ত ফলাফল কোষের মৃত্যু। এধরণের প্রোটিনগুলোর পরিমাণ কমিয়ে আনার ফলে আয়ুষ্কাণ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে প্রোটিজমের দ্বারা এদের ক্ষয় কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হলে আয়ুষ্কাল হ্রাস পায়। গবেষণার সারাংশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে
ডাঃ সেদা কোয়েঙ্কু এমনটাই বলেছেন। এবিষয়ক সুদীর্ঘ একটি ডেটা সেট প্রণয়ন ছাড়াও তাঁরা দেখিয়েছেন, ইউবিকুইটিনের প্রভাবে পরিবর্তিত প্রোটিজমে সংঘটিত পরিবর্তনসমূহ শনাক্ত করতে পারলে বয়োবৃদ্ধির আরো নতুন বৈশিষ্ট্য এবং আয়ুষ্কালকে প্রভাবিত করে এমন আরো নতুন নিয়ামকের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও ড. ডেভিড ভিলচেজ জানিয়েছেন, গবেষণায় তাঁদের প্রাপ্ত তথ্যগুলো বয়োবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বিলম্বকরণ এবং সেইসাথে বৃদ্ধবয়সে জীবনের মান উন্নয়নে কাজে লাগার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণাপত্র: Rewiring of the ubiquitinated proteome determines ageing in C. elegans. Nature (2021)
DOI: 10.1038/s41586-021-03781-z