স্পেনের Dolmen of El Pendónis নামক সমাধিক্ষেত্র থেকে আনুমানিক ৬ হাজার বছরের পুরনো কানের ভেতরের শল্যচিকিৎসার নিদর্শন যুক্ত খুলি পাওয়া গেল।
পুরাতত্ত্ববিদদের ধারণা উক্ত রোগী double-sided acute middle ear infection অর্থাৎ কানের পর্দার সংক্রমণের শিকার ছিলেন যার কারণে তাঁর কানে প্রচণ্ড প্রদাহ হতো এবং জ্বর পর্যন্ত হতো।
উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে তাঁর কানের পর্দার ভেতরে সংক্রামিত তরল জমে কানের ভেতর প্রচণ্ড ব্যথার উদ্রেক করতে পারতো, মাথার খুলি উল্লেখযোগ্যভাবে ফুলিয়ে তুলতে পারতো, শ্রবণক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে পারতো, এমনকি মস্তিষ্কের বাইরের পর্দায় প্রাণঘাতী ব্যথারও উদ্রেক করতে পারতো।

ছবি: Navarro/Scientific Reports
বর্তমানে কানের সংক্রমণের চিকিৎসা সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হলেও ঊনিশ শতকের মধ্যভাগের আগে পর্যন্ত কেবলমাত্র মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় হয়েই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। কিছু ঐতিহাসিক পুঁথি ও গ্রন্থের উল্লেখ অনুযায়ী কানের এই চিকিৎসা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতক থেকে ব্যবহৃত হলেও কোনও পোক্ত প্রমাণ হাতে আসেনি।
কিন্তু এই খুলির আবিষ্কারের ফলে প্রমাণ হচ্ছে যে এই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতির হাজার হাজার বছর আগেও প্রচেষ্টা করা হয়েছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে একপ্রকার নিরুপায় হয়েই।
Dolmen of El Pendónis সমাধিক্ষেত্রটি খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০১ বছরের মধ্যে ব্যবহৃত হতো এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে মৃতদেহগুলির মধ্যে অভিন্নতা রক্ষার জন্য হাড়গুলিকে খুব যত্ন করে আলাদা করা হয়েছিল। সেগুলোকে এতটাই যত্নের সহিত আলাদা করা হয়েছিল যে মাথার খুলিটির মালিকের বয়স সম্বন্ধে জানার জন্য দাঁত বা অন্য কোনও শারীরিক অংশের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা এটি একজন মহিলার খুলি এবং মাথার খুলির হাড়ের এক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা পরিমাপ করে তাঁর বয়স ৩৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে যা সেইসময় বৃদ্ধ বয়স হিসেবেই গণ্য করা হতো।
সেই মহিলার কানের সংক্রমণের ভয়াবহতা ছিল মারাত্মক, যার কারণেই তিনি সেই যুগে কোনরকম অসাড়করণ পদ্ধতি ছাড়াই এই চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে জানার পরেও।
তাঁর কানের পেছন দিয়ে মাথার খুলি ভেদ করে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল জন্য তাঁকে অবশ্যই জোর করে চেপে ধরে রাখতে হয়েছিল অথবা তাঁর শরীরে কিছু প্রয়োগ করে অনুভূতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যদিও তাঁর ওপর প্রয়োগ করা অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিলো বলেই দাবী বিজ্ঞানীদের। কারণ সংক্রমণের কারণে তাঁর মাথার পেছনের হাড়ের ক্ষয়ে যাওয়ার নিদর্শন মিললেও ধীরে ধীরে সেখানে আবার সাধারণ নিরাময় পদ্ধতিতেই পুনরায় হাড়ের বৃদ্ধি ঘটেছে এবং মৃত্যুর সময় সংক্রমণের তেমন কোনও নিদর্শন ছিলনা।
তাঁর দুই-কানে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলেও কেবলমাত্র বামদিকের কানেই ইংরিজি ‘V’ (ভি) আকৃতির ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ডানদিকের কানে এই ধরনের কোনও আঘাতের চিহ্নর অনুপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে মৃত্যুর আগে তাঁর ডানকানের ক্ষত সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ তাঁকে দুইবার মৃত্যু যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।
গবেষণাপত্রের লেখকের মতে, “হাড়ের পুনঃনির্মাণের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে জানা গিয়েছে প্রথম অস্ত্রোপচার ডানকানেই হয়েছিল, কারণ কানের বিকারতত্ত্ব পরীক্ষা করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গিয়েছিল যার চিকিৎসা অতিসত্ত্বর প্রয়োজনীয় ছিল এবং এই মহিলা সেই অস্ত্রোপচার সহ্য করতে পেরেছিলেন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “ডানদিকের পরে বামদিকে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, কিন্তু আমাদের পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয় যে উভয় কানের অস্ত্রোপচার খুব অল্প কদিনের ব্যবধানে করা হয়েছিল নাকি কয়েক মাস নাকি বেশ কয়েক বছরের ব্যবধানে। এখনও অবধি এটাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম টেম্পোরাল হাড়ের অস্ত্রপচার এবং খুব সম্ভবত মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রথম রেডিক্যাল মাসটয়ডেক্টমি (radical mastoidectomy)“।
উক্ত গবেষণাপত্রটি Scientific Reports নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্র: The first otologic surgery in a skull from El Pendón site (Reinoso, Northern Spain), Scientific Reports (2022).