ওয়েস্টার্ন উলি ফ্লাইং স্কুইরেল বা পশমওয়ালা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি পৃথিবীর দুর্লভতম ও সবচেয়ে কম গবেষনাকৃত প্রাণিসমূহের মধ্যে অন্যতম। সর্বোচ্চ সম্ভাব্য ২.৫ কেজি ওজন এবং সর্বমোট ১১০ সে.মি (৪৩.৩ ইঞ্চি) উচ্চতাবিশিষ্ট এই প্রাণি বিশ্বের বৃহত্তম গ্লাইডিং করা প্রাণিগুলোর মধ্যেও অন্যতম।
১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ প্রাণিবিদ ওল্ডফিল্ড থমাস পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের Astor (বর্তমানে Astore) এবং Gilgit নামক জেলা থেকে পাওয়া দুইখণ্ড ত্বক এবং একটি খুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই রহস্যময় প্রজাতিটি সম্পর্কে যথাযথ বর্ণনা করেছিলেন।
পাকিস্তানের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় কর্তৃক পুনরাবিষ্কারের আগে ১৯২৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতিটিকে বিলুপ্ত মনে করা হত।
অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর গবেষক ড. ক্রিস্টোফার হেলগেন, ড. স্টিফেন জনসন এবং তাঁদের সহকর্মীরা বলেন,
“Western woolly flying squirrel বা পশমওয়ালা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি পাইন গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং বিশ্রাম করে পাথরের ফাটলে৷ উড়ন্ত কাঠবিড়ালিদের মধ্যে এই প্রজাতির গালের দাঁতগুলোর (cheekteeth) অগ্রভাগ সবচেয়ে উঁচু এবং অত্যন্ত বিশেষায়িত। তাদের মল, মূত্র এবং লোম শিলাজিৎ (Shilajit) প্রস্তুত করা হয়, যা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে”
তাঁরা আরো বলেন,
“নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিগুলোর বাস্তুসংস্থান সম্পর্কে খুব কমই জানা গিয়েছে এবং এর জন্য অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন।”

ক্রেডিট: Oldfield Thomas, Journal of the Asiatic Society of Bengal
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জাদুঘরে সংরক্ষিত নমুনাসমূহ পরীক্ষা করেছেন, সেসবের ছবি তুলেছেন এবং পূর্বে প্রকাশিত রেকর্ডসমূহও পর্যালোচনা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন – হিমালয়ের পশ্চিম (উত্তর পাকিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত), উত্তর-কেন্দ্রীয় (দক্ষিণ-কেন্দ্রীয় তিব্বত, উত্তর সিকিম এবং পশ্চিম ভুটান) এবং দক্ষিণ-পশ্চিম (চীনের ইউনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) সীমানা বরাবর তিনটি এলাকায় এই গণটি (genus) বিস্তৃত। অঙ্গসংস্থানসংক্রান্ত পরীক্ষা এবং আণবিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এই তিনটি জনসংখ্যা পৃথক তিনটি প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করে।
আরো পড়ুন:
কোয়ান্টাম মাইক্রোস্কোপ তৈরি করলো গবেষকরা যা দিয়ে অসম্ভবকেও দেখা যাবে!
এদের মধ্যে দুটি প্রজাতি নতুন, Tibetan woolly flying squirrel (Eupetaurus tibetensis) এবং Yunnan woolly flying squirrel (Eupetaurus nivamons)
গবেষকগণ আরো বলেন,
“এই ব্যতিক্রমী প্রজাতিগুলো হিমালয়ের সর্বোচ্চ অঞ্চলে(৩,৫০০ মি./১১,৫০০ ফুটের বেশি উচ্চতায়) ট্রি লাইনের কাছাকাছি বাস করে।”
“এই আবিষ্কার পৃথিবীর প্রাণিকূলের বৈচিত্র্য এবং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষণের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।”
“এজাতীয় অধিকাংশ কাজের জন্য প্রয়োজন সতর্কতাপূর্ণ তুলনা, যা কেবলমাত্র জাদুঘরের প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংগ্রহশালাতেই করা সম্ভব। সেজজ্য জাদুঘরের প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংগ্রহশালা আরো উন্নতকরণে মনোনিবেশ করা উচিৎ”
গবেষনাটি ৩১শে মে, ২০২১ এ Zoological Journal of the Linnean Society জার্নালে প্রকাশিক হয়।
গবেষনা পত্র (VPN প্রয়োজন): Across the great divide: revision of the genus Eupetaurus (Sciuridae: Pteromyini), the woolly flying squirrels of the Himalayan region, with the description of two new species. Zoological Journal of the Linnean Society (2021); doi: 10.1093/zoolinnean/zlab018